ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ প্রথম দিকের কয়েক বছরের মধ্যে যারা মুসলিম হয়েছিলেন তাদের যে অবর্ণনীয় দুঃখ,দৈন্য, দুর্দশা নির্যাতন ও নিপীড়নের মধ্যে নিপতিত হতে হয়েছিল এবং যেভাবে তাঁরা অসাধারণ ধৈর্য, ত্যাগ, তিতিক্ষা, সাহস, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা, পারস্পারিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে কোন কোন ক্ষেত্রে জীবন দিয়ে, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাণকে বিপন্ন করে শিশু ইসলামকে লালন করে তার বিকাশ ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন তা গভীরভাবে অনুধাবন করে বিশ্বের বড় বড় পণ্ডিত এবং গুণী ব্যাক্তিগণ একদিকে যেমন হতবাক হয়ে যান। তেমনি সত্যের প্রতি তাঁদের আবিছল নিষ্ঠা, কর্তব্যবোধ, কর্তব্যকর্মে দৃঢ়তা ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করে তাঁরা চমৎকৃত এবং মুগ্ধ হতে থাকেন।একই সঙ্গে তাঁদের মনে এ প্রশ্নের উদয় হতে থাকেন যে, কী কারণে , কোন জাদু মন্ত্র বলে এ অসাধ্য তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। অসংখ্য অগণিত মানুষের এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর কী হতে পারে তার প্রতি কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা প্রয়োজন মনে করেই নিম্নোক্ত আলোচনা পেশ করছি ,
১.আল্লাহর প্রতি ঈমান,
উপর্যুক্ত প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য উত্তরমালার মধ্যে সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচেছ সমগ্র বিশ্বজাহানের অনাদি অনন্ত অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান স্রষ্টা প্রতি পালক আল্লাহ তা'আলার প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস এবং তাঁর অস্তিত্ব,হিকমত এবং কুদরত সম্পর্কে সঠিক এবং সুস্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান। কারণ, তাওহীদের সুস্পষ্ট এবং তওহিদী নূরে যখন মুমিনের অন্তর আলোকিত , উদ্বেলিত ও পুলকিত হয়ে ওঠে, পর্বত-প্রমান প্রতিবন্ধকতাও তখন তাঁদের সামনে শুল্ক তৃণখণ্ডের মত তুচ্ছ মনে হয়। যে মুমিন পরিপক্ক ও সুদৃঢ় ঈমান এবং মুজবুত ইয়াকিনের অধিকারি হওয়ার দুর্লভ সৌভাগ্য লাভ করেন, তাঁর সামনে পৃথিবীর যত প্রকট সমস্যাই আসুক না কেন, তা যতই ভয়ংকর ও ভীতিপ্রদই হোক না কেন, তাঁর অটল বিশ্বাসের বলীয়ান চেতনা এবং তাওহীদের অলৌকিক আস্বাদে এসব কিছুকে ইষ্টখন্ডের উপর জমে উঠা শেওলার চেয়ে বেশি কিছুই মনে করেন না। এ কারণেই ঈমানী সুরার অলৌকিক আস্বাদে পরিতৃপ্ত কোন ঈমানদারে প্রাণের সজীবতা এবং উদার উন্মুক্ত চিত্তের আনন্দানুভূতি মূর্খ ও নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানব সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণাকে কক্ষনো পরোয়া করে না।
উপর্যুক্ত প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য উত্তরমালার মধ্যে সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচেছ সমগ্র বিশ্বজাহানের অনাদি অনন্ত অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান স্রষ্টা প্রতি পালক আল্লাহ তা'আলার প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস এবং তাঁর অস্তিত্ব,হিকমত এবং কুদরত সম্পর্কে সঠিক এবং সুস্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান। কারণ, তাওহীদের সুস্পষ্ট এবং তওহিদী নূরে যখন মুমিনের অন্তর আলোকিত , উদ্বেলিত ও পুলকিত হয়ে ওঠে, পর্বত-প্রমান প্রতিবন্ধকতাও তখন তাঁদের সামনে শুল্ক তৃণখণ্ডের মত তুচ্ছ মনে হয়। যে মুমিন পরিপক্ক ও সুদৃঢ় ঈমান এবং মুজবুত ইয়াকিনের অধিকারি হওয়ার দুর্লভ সৌভাগ্য লাভ করেন, তাঁর সামনে পৃথিবীর যত প্রকট সমস্যাই আসুক না কেন, তা যতই ভয়ংকর ও ভীতিপ্রদই হোক না কেন, তাঁর অটল বিশ্বাসের বলীয়ান চেতনা এবং তাওহীদের অলৌকিক আস্বাদে এসব কিছুকে ইষ্টখন্ডের উপর জমে উঠা শেওলার চেয়ে বেশি কিছুই মনে করেন না। এ কারণেই ঈমানী সুরার অলৌকিক আস্বাদে পরিতৃপ্ত কোন ঈমানদারে প্রাণের সজীবতা এবং উদার উন্মুক্ত চিত্তের আনন্দানুভূতি মূর্খ ও নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানব সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণাকে কক্ষনো পরোয়া করে না।
কোরান মাজীদে যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,
ফেনা খড়কুটোর মত উড়ে যায় , আর যা মানুষের জন্য উপকারী তা যমীনে স্থিতীশীল হয়।(আর-রাআদঃ ১৭)
তারপর এ কারণের সূত্র ধরেই অস্তিত্ব লাভ করে অজস্র কারণ যা সেই ধৈয ,সহিষূঋতা ও দৃঢ়টাকে আরও মজবুত করে তোলে।
২। মহিমান্বিত ও প্রাজ্ঞ পরিচালনাঃ
২। মহিমান্বিত ও প্রাজ্ঞ পরিচালনাঃ
এটা সর্বজনতবিদিত এবং সর্ববাদী সস্মত সত্য যে,নাবী কারীম (সাঃ) ছিলেন বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ এবং সাধারণ বিশ্বমানবের জন্য মহিমান্বিত পরিচালক ও প্রাজ্ঞ পথপ্রদর্শক। দেহে, মন-মানসিকতায়, নেতৃত্বে, সৌজন্যে , সদাচারে তিনি ছিলেন সব প্রজন্মের সকলের জন্য আদর্শ , অপরূপ দৈহিক সুষমা, আধ্যাত্মিক পরিপূণতা,মহোত্তম চরিত্র, বিনম্র স্বভাব , উদার -উন্মুক্ত আচরণ, ন্যায়নিষ্ঠ কার্যকলাপ , অসাধারণ পাণ্ডিত্য বুদ্ধিমত্মা ও বাগ্মিতা সব কিছুর সমন্বয়ে তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার সান্নিধ্য কিংবা সাহচর্যে মানুষ একবার এলে বার বার ফিরে ফিরে আসার জন্য আপনা থেকেই প্রলুব্ধ হতো এবং তাঁর (সাঃ) খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করে দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠতো। তাঁর বিনয় নম্র আচরণ, সত্যবাদিতা , সহনশীলতা , সহমর্মিতা , আমানতদারী, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সদগুনাবলীর জন্য বন্ধু-বান্ধব দুরের কথা, শত্রুরাও তাঁকে শ্রদ্ধা না করে পারতেন না। তাঁর বিশ্বাস যোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত । তাঁর শত্রুরাও তাঁর কোন উক্তি কিংবা অঙ্গীকারকে যে অবিশ্বাস্য বলে মনে করতে পারতেন না তার বহু প্রমান রয়েছে। এমন কিছু ঘটনা কথা উল্লেখ করা হলঃ
এক দফা কুরাইশগনের এমন তিন বাক্তি একত্রীত হয় যারা পৃথক পৃথকভাবে একজন অন্যজনের অগোচরে কোরআন পাঠ শ্রবণ করেছিল । কিন্তু পরে তাঁদের প্রত্যেকের এ গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ে ।সেই তিনজনের এক জন ছিল আবু জাহল। তিন জন যখন একত্রীত হল তখন এক জন আবু জাহলকে বলল "তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নিকট যা শ্রবণ করেছ সে সম্পর্কে তোমার মতামত কী তা বল।"
আবূ জাহল বলল ,'আমি কি আর এমন শুনেছি। প্রকৃত কথা হচ্ছে আমরা এবং বনু আবদে মানাফ মান-মর্যাদার ব্যাপারে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করে আসছি ।তাঁরা যেমন গরীব মেসকিনদের খানা খওয়ায় , আমরও তেমনি তাদের খানা খওয়াই। তারা দান-খয়রাত করে, আমরাও তা করি । তারা জনগণকে বাহন প্রদান করে আমরাও তা করি। এখন আমরা এবং তারা উভয় পক্ষই সর্বক্ষেত্রেই একে অন্যের সমকক্ষ হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতারত দুটো ঘোড়ার ন্যায় উর্ধ্বশ্বাসে আবিরাম ছুটে চলেছি।এখন তাঁরা নতুনভাবে বলতে শুরু করেছে যে, তাদের মাঝে একজন নাবী আছেন যার নিকট আকাশ থেকে আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হয়। আচ্ছা, বলত আমরা তাহলে কি ভাবে তাদের নাগাল পেতে পারি? আল্লাহর কসম! আমরা ঐ বাক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব না এবং কখনই সত্যবাদী বলব না, যেমন টি আবু জাহল বলতো হে মুহাম্মাদ (সাঃ) ! আমরা তোমাকে মিথ্যুক বলছিনা কিন্তু তুমি যা নিয়ে এসেছ তা মিথ্যেয় মনে করছি এবং এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত আবতীর্ণ করেন,
আবূ জাহল বলল ,'আমি কি আর এমন শুনেছি। প্রকৃত কথা হচ্ছে আমরা এবং বনু আবদে মানাফ মান-মর্যাদার ব্যাপারে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করে আসছি ।তাঁরা যেমন গরীব মেসকিনদের খানা খওয়ায় , আমরও তেমনি তাদের খানা খওয়াই। তারা দান-খয়রাত করে, আমরাও তা করি । তারা জনগণকে বাহন প্রদান করে আমরাও তা করি। এখন আমরা এবং তারা উভয় পক্ষই সর্বক্ষেত্রেই একে অন্যের সমকক্ষ হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতারত দুটো ঘোড়ার ন্যায় উর্ধ্বশ্বাসে আবিরাম ছুটে চলেছি।এখন তাঁরা নতুনভাবে বলতে শুরু করেছে যে, তাদের মাঝে একজন নাবী আছেন যার নিকট আকাশ থেকে আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হয়। আচ্ছা, বলত আমরা তাহলে কি ভাবে তাদের নাগাল পেতে পারি? আল্লাহর কসম! আমরা ঐ বাক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব না এবং কখনই সত্যবাদী বলব না, যেমন টি আবু জাহল বলতো হে মুহাম্মাদ (সাঃ) ! আমরা তোমাকে মিথ্যুক বলছিনা কিন্তু তুমি যা নিয়ে এসেছ তা মিথ্যেয় মনে করছি এবং এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত আবতীর্ণ করেন,
...................................................................................................
"কেননা তাঁরা তোমাকে মিথ্যে মনে করে না,প্রকৃতপক্ষে যালিমরা আল্লাহর আয়াতকেই প্রত্যাখান করে ।"(আল-আন আম : ৩৩)
এ ঘটনা পূবে সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একদিন কাফেরগন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে তিনবার অভিশাপ দেন তৃতীয় দফায় নাবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করলেন,...........................................................................
অর্থ:
অর্থ:
"হে কুরাইশগণ আমি কুরবানির পশু নিয়ে তোমাদের নিকট আগমন করছি,"
এ কথা তখন তাদের উপর এমনভাবে প্রভাব সৃষ্টি করল যে ,যে ব্যক্তি শত্রুতায় সকলের চেয়ে আগ্রগামী ছিল সে-ই সবোৎকৃষ্ট কথাবার্তা দ্বারা নবী (সাঃ) কে সন্তষ্ট করতে সচেষ্ট হল।অনুরূপ একটি ঘটনারও বিস্তারিত বিবরন ইতি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি ছিল সিজদারত আবস্থায় যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ করা হয় এবং তারপর মাথা উত্তলন করেন তখন তিনি নিক্ষেপকারীর বিরুধে বদদোয়া করতে থাকেন তখন তাঁরা একদম অস্থির হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ভয় ভীতি ও দুশ্চিন্তার ঢেউ প্রবাহিত হতে থাকে। তাঁরা আর বাঁচতে পারবে না বলে তাদের মনে স্থির বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।অন্য একটি ঘটনায় এটা উল্লেখিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন আবূ লাহাবের পুত্র "উতায়বার বিরুধে বদ দু,আ করলেন তখন তাঁর স্থির বিশ্বাস হয়ে গেল যে , সে নাবী করিম (সাঃ) এর বদ দু'আ থেকে কিছুতেই মুক্তি পাবে না ।যেমনটি শাম রাজ্য সফর আবস্থায় ব্যাঘ্র দেখেই বলেছিল, "আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাঃ) মক্কা থেকেই আমাকে হত্যা করল।'
এ কথা তখন তাদের উপর এমনভাবে প্রভাব সৃষ্টি করল যে ,যে ব্যক্তি শত্রুতায় সকলের চেয়ে আগ্রগামী ছিল সে-ই সবোৎকৃষ্ট কথাবার্তা দ্বারা নবী (সাঃ) কে সন্তষ্ট করতে সচেষ্ট হল।অনুরূপ একটি ঘটনারও বিস্তারিত বিবরন ইতি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি ছিল সিজদারত আবস্থায় যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ করা হয় এবং তারপর মাথা উত্তলন করেন তখন তিনি নিক্ষেপকারীর বিরুধে বদদোয়া করতে থাকেন তখন তাঁরা একদম অস্থির হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ভয় ভীতি ও দুশ্চিন্তার ঢেউ প্রবাহিত হতে থাকে। তাঁরা আর বাঁচতে পারবে না বলে তাদের মনে স্থির বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।অন্য একটি ঘটনায় এটা উল্লেখিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন আবূ লাহাবের পুত্র "উতায়বার বিরুধে বদ দু,আ করলেন তখন তাঁর স্থির বিশ্বাস হয়ে গেল যে , সে নাবী করিম (সাঃ) এর বদ দু'আ থেকে কিছুতেই মুক্তি পাবে না ।যেমনটি শাম রাজ্য সফর আবস্থায় ব্যাঘ্র দেখেই বলেছিল, "আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাঃ) মক্কা থেকেই আমাকে হত্যা করল।'
অন্য একটি ঘটনায় এটা উল্লেখ করা হয়েছে যে, উবাই বিন খালফ নাবী কারীম (সাঃ) হত্যা করার জন্য বারবার হুমকি দিতেছিল। এক দফা নাবী কারীম (সাঃ) উত্তরে বললেন যে, (তোমরা নয়) বরং আল্লাহ চেয়ো আমিই তোমাদের হত্যা করব, ইনশা-আল্লাহ।' এর পর উহুদের যুদ্ধে নাবী কারীম (সাঃ) যখন উবায়ের গলদেশ বর্শার দ্বারা আঘাত করলেন , তখন যদিও সে আঘাত খুবই সামান্য ছিল তবুও উবাই বারবার এ কথাই বলছিল যে, মুহাম্মাদ আমাকে মক্কায় বলেছিলেন যে, আমি তোমাকে হত্যা করব। কাজেই, সে যদি আমার গায়ে থুথুও দিত তাতেও আমার মৃত্যু হয়ে যেত।
এমনভাবে এক দফা সা'দ বিন মা'আয মক্কায় উমাইয়া বিন খালাফকে বলেছিল,"আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, মুসলিমগণ তমাদেরকে হত্যা করবে তখন থেকে উমাইয়া ভীষণভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ভয় ভীতি তাঁর অন্তরে সর্বক্ষণ বিরাজমান থাকে। তাই সে মনে স্থির করেছিল যে, সে কখনই মক্কার বাইরে যাবে না। কিন্তু বদর যুদ্ধের সময় আবূ জাহলের পীড়াপীড়ি এবং চাপের মুখে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য মক্কার বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনবোধে যাতে দ্রুত পশ্চাৎপসারণ সম্ভব হয় সে উদ্দেশে সে মক্কার সবচেয়ে দ্রুতগামী উটটি ক্রয় করে নিয়ে তাঁর উপর সওয়ার হয়ে যুদ্ধে যায়।
এ দিকে যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি প্রত্যক্ষ করে তাঁর স্ত্রীও তাকে এ বলে বাধা দেয় যে,"আবূ সাফয়ান! আপনার ইয়াসরিবী ভাই যা বলেছিলেন আপনি কি তা ভুলে গেছেন? সে উত্তর দিল যে,"না ভুলি নি, তবে আল্লাহর শপথ, তাদের সঙ্গে আমি অল্প দুরেই যাব।
এইত ছিল নাবী (সাঃ) শত্রুদের অবস্থা , অন্যদিকে তাঁর সাহাবীগণ ( রা: ) সঙ্গী-সাথী ও বদ্ধু-বাদ্ধবগণের সকলের কাছে প্রণের চেয়েও প্রিয়। তিনি ছিলেন সকলের চিন্তা চেতনা ও অন্তরের চিকিৎসক। তাঁদের অন্তর থেকে উৎসারিত ভক্তি ও ভালবাসার ধারা ঠিক সেভাবে নাবী (সাঃ) এর দিকে প্রবাহিত হতো যেমনটি জলের ধারা উচছ থেকে নিম্নভূমির দিকে প্রবলবেগে প্রবাহিত হতে থাকে এবং তাঁদের সকলের প্রাণ ঠিক সেইভাবে নাবী (সাঃ) এর প্রাণের দিকে আকর্ষিত হতে থাকতো, যেমনটি সাধারণ লৌহখণ্ড আকষিত হতে থাকে চুম্বক লৌহের আকর্ষণে।
.........................................................................................................
অর্থ: " মুহাম্মাদের ছবি প্রতিটি মানবদেহের জন্য মূল অস্তিত স্বরূপ ছিল এবং তাঁর বাস্তব অস্তিত প্রতিটি অন্তরের জন্য চুম্বকের মতো ছিল।"
রাসূলুল্লাহ (সাঃ),র জন্য সাহাবিগণের এর অন্তরে প্রেম, প্রীতি , শ্রদ্ধা,ভক্তি ও ভালবাসার যে বেহেশতি ধারা সর্বক্ষণ প্রবাহিত হতো , অখন্ড মানব জাতির ইতিহাসে কোথাও তার কোন তুলনা মেলেনা । সাহাবীগণ (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য কক্ষনো কোন ত্যাগ স্বীকারকেই বড় বলে মনে করতেন না। এমনকি তাঁরা এ কথাও পছন্দ করতেন না যে, তাঁর পায়ে কাঁটার আঁচড় লাগুক । তাঁর জন্য তাঁদের নিজেদের জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করতে তাঁরা সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকতেন।
একদিন আবূ বাকর সিদ্দীক (রা:) অত্যন্ত শোচোনীয়ভাবে প্রহিত হলেন। উতবাহ বিন বারী'আহ তাঁর নিকট এসে তালিযুক্ত জুতো দ্বারা প্রহার করতে লাগল। বিশেষ করে চেহারা লক্ষ করে মারতে মারতে তাঁর পিঠের উপর চড়ে বসল । এ অবস্থায় তাঁর গোত্র বনু তাইমের লোকজন তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে বাড়ি আনে। তাদরে বিশ্বাস ছিল যে, তিনি আর বাঁচবেন না । কিন্তু দিনের শেষ ভাগে তাঁর কথা বের হল। আর সবকিছুর আগে প্রশ্ন করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অবস্থা কী? এর জন্য বনু তাইমের লোকেরা তাঁকে বকাঝকা করল। তাঁর মা উম্মুল খায়েরকে এ কথা বলে তাঁরা ফিরে গেল যে, তাঁকে কিছু পানাহার করাবে। একেবারে একাকী অবস্থায় তিনি আবূ বাকর(রা:) কে কিছু পানাহারের জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি এ কথাই বলতে থাকলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কী অবস্থায়? পরিশেষে উম্মল খায়ের বললেন, "আমি তোমার সাথীর সংবাদ জানি না।" আবূ বাকর( রা:) বললেন উম্মু জামীল বিনতে খাতাবের নিকট যাও এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করো। " তিনি উম্মু জামীলের নিকট গিয়ে বললেন, আবূ বাকর(রা:) , তোমার নিকট মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে।উম্মু জামীল বললেন আমি না চিনি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে না চিনি আবূ বাকর(রা:) কে । তবে তুমি যদি চাও তাহলে তোমার সাথে তোমার পুত্রের নিকট যেতে পারি।'
উম্মুল খায়ের বললেন, "খু-উ-ব ভালো"
উম্মুল খায়ের বললেন, "খু-উ-ব ভালো"
এরপর উম্মু জামীল তার সঙ্গে এসে দেখলেন আবূ বাকর(রা:) চরম শান্ত ক্লান্ত এবং বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন । তারপর তাঁর নিকটবর্তী হয়ে চিৎকার করে বললেন, " যারা আপনাকে এই দূরঅবস্থায় মধ্যে নিপতিত করেছে তাঁরা অবশ্যই জঘন্য প্রকৃতির লোক এবং অমানুষ কাফের ।আমি আশা করি যে ,আল্লাহ আপনার প্রতি এ অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।
আবূ বাকর(রা:) জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর কী হয়েছে?
তিনি বললেন, আপনার মা তো শুনছেন"।
বললেন কোন অসুবিধা নেই,
তিনি বললেন,"সহী সালামতে আছেন।"
" কোথায় আছেন তিনি?'
আবূ বাকর(রা:) বললেন 'যতক্ষণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত না হব ততক্ষণ আমি খাদ্য কিংবা পানীয় কোন কিছুই গ্রহণ করবো না।এটাই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আমার অঙ্গীকার।'
তারপর উম্মুল খায়ের এবং উম্মু জামীল সেখানেই আবস্থন করলেন। লকদের আগমন ও প্রত্যাগমন বন্ধ হয়ে যাবার পর যখন নিস্তব্ধতা বিরাজ করতে থাকল,তখন মহিলাদ্বয় আবূ বাকর(রা:) কে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন । তিনি তাঁদের উপর ভর দিয়ে চলতে থাকলেন এবং এভাবে তাঁরা তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে পোঁছে দিলেন।
নাবী (সাঃ)-এর জন্য শ্রদ্ধা,মহাব্বাত, উৎসর্গীকরণ ও ত্যাগ তিতিক্ষার বিরল ঘটনাবলী এ গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে,বিভিন্ন প্রসঙ্গে বর্ণিত হবে ।বিশেষ করে উহুদ যুদ্ধের ঘটনাবলী এবং খোবায়েবের প্রসঙ্গে সেগুল বিশেষভাবে উল্লেখ করা হবে।
৩। দায়িত্বদের অনুভূতিঃ
সাহাবিগন (রা:) এটা সুস্পষ্টভাবে অবগত ছিলেন যে,এ একমুষ্টি মাটি যাকে "মানুষ" বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে আল্লাহর তরফ থেকে তাঁর উপর যে বিশাল এবং দুর্বহ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে কোন অবস্থাতেই তা থেকে বিমুখ হওয়া কিংবা তাঁকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। কারণ, দায়িত্ববিমুখ হলে কিংবা দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে তাঁর ফল যা হবে তা কাফের মুশরিকগণের অন্যায়, অত্যাচার এবং নির্যাতন নিপীড়নের তুলনায় সাত সহস্র গুণ বেশি ভয়াবহ এবং বিধ্বংসকারী হবে। অধিকংশ কর্ত্যববিমুখ হলে কিংবা কর্ত্যব এড়িয়ে গেলে নিজের এবং সমস্ত মানবতার যে ক্ষতি হবে এবং এমন সব সমস্যার উদ্ভব হবে যার তুলনায় এ সব দুঃখ কষ্ট এবং ক্ষয় ক্ষতি তেমন কিছুই নয়।
৪। পরকালীন জীবনে বিশ্বাস
আল্লাহর জামীনে দ্বীন কায়েম করার ব্যাপারে আল্লাহর তরফ থেকে মানুষের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তৎসম্পর্কিত বোধকে শক্তিশালী এবং কর্মমুখী করার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে পরপকালীন জীবনে বিশ্বাস। সাহাবা কীরাম (রা:) এ কথার উপর অটল বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন যে,পরকালীন জিবনে বিচার দিবসে তাদেরকে অবশ্যই রাব্বুল আলামিনের নিকট নিজেদের কার্যকলাপের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম হিসাব দিতে হবে। পুণ্যবানগণ অনন্ত সুখশান্তির চিরস্থায়ী আবাস জান্নাতে চিরকাল মহাসুখে বসবাস করতে থাকবেন।পক্ষান্তরে , পাপীতাপীগণ দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রণার আবাসস্থল জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়ে অবর্ননীয় দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে। তাই তাঁরা সর্বক্ষণ কল্যাণমুখী কাজকর্মে লিপ্ত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা জান্নাত লাভের আশায় উন্মুখ হয়ে থাকতেন। অন্যদিকে তেমনি মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টি জাহান্নামের ভয়ে অস্থির হয়ে থাকতেন। যেমনটি নিম্নোক্ত আয়াতে কারীমায় বণিত হয়েছে-
'যারা তাঁদের দানের বস্তু দান করে আর তাঁদের অন্তর ভীত শংকিত থাকে এ জন্য যে, তাদেরকে তাঁদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে।'(আল-মু'মিমূন ২৩: ৬০)
এ বিষয়ে তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ, বিত্তবৈভব ও ভোগবিলাস, পরলৌকিক জিবনে সে সবের তুলনায় মশার একটি পাখার সমতুল্যও নয়। তাঁদের এই বিশ্বাস এতটাই দৃঢ়মূল ছিল যে, এর সামনে পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট, জুলুম নির্যাতন সব ছিল অত্যন্ত তুচ্ছ ব্যাপার। কাজেই জুলুম নির্যাতণের মাত্রা যতই বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁদের ইয়াকিন এবং সহনশীলতাও ততোধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে যা কাফির মুশরিক বিরোধী পক্ষকে হতভম্ব ও হতবাক করে দিয়েছে।
৫। আল-কুর আন
কাফির মুশরিকসৃষ্ট ভয়ংকর বিপদ আপদ ও ঘোর সামাজিক অনাচার এবং অবক্ষয় জনিত অদ্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় এমন সব সুরা ও আয়াত সমূহ আবতীর্ণ হয়েছিল যার মধ্যে নিবিড় অথচ আকর্ষনীয় পদ্ধতিতে ইসলামের মৌলিক নিয়ম কানুনের উপর প্রমাণাদি এবং তবালিগের কাজ ও পূর্ণোদ্যমে চলছিল। এ আয়াতসমূহে ইসলামের অনুসারীগণকে এমন সব মোলিক কাজ কর্ম করতে বলা হচ্ছিল যার উপর ভিতি করে আল্লাহ তা'আলা মানবগোষ্ঠির সব চেয়ে উন্নত সমাজ অথাৎ ইসলামী সামাজের নির্মাণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ইঙ্গিত দিয়েছেন। উল্লেখিত আয়াতসমূহের মাধ্যমে মুসলিমগণের অবেগ ও অনুভূতিকে স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তা দান করা হচ্ছিল।আয়াতে কারীমাঃ-
'তোমরা কি এমন ধারনা পোষণ কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে , অথচ এখনও পর্যন্ত তোমাদের আগের লোকদের মত অবস্থা তোমাদের সামনে আসেনি? তাদেরকে অভাবের তীব্র তাড়না এবং মসীবত স্পর্শ করেছিল এবং তাঁরা এতদূর বিকম্পিত হয়েছিল যে , নবী ও তাঁর সঙ্গের মু'মিনগণ চিৎকার করে বলেছিল-আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে ? জেনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহ্র সাহায্য নিকটবর্তী ।'(আল-বাকারা ২: ২১৪)
আলিফ-লাম-মিম। লোকেরা মনে করে যে, 'আমরা ইমান এনেছি' বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে দেওয়া হবে, আর তাঁদের কে পরীক্ষা করা হবে না? তাঁদের পূবে যারা ছিল আমি তাঁদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম ; তারপর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।'[আল-আনকাবূত(২৯) ১-৩]
আর তাঁদেরই পাশে পাশে এমন আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হচ্ছিল যার মধ্যে কাফির ও বিরুদ্ধাচারণকারীদের প্রশ্নের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হয়েছে।তাদের জন্য কোন প্রকার সুযোগ সুবিদার আবকাশই দেয়া হয় নি। অধিকন্ত তাদেরকে অত্যন্ত সহজ এবং সুস্পষ্ট ভাবে এত বলে দেওয়া হয়েছে যে, যদি কেউ আপন ভ্রষ্টতা ও অবাধ্যতায় একঘুয়েমি ভাব পোষণ করে থাকে তাহলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এর প্রমাণ স্বরূপ বিগত জাতিগুলোর এমন সব ঘটনা এবং ঐতিহাসিক সাক্ষ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে যদদ্বারা এটা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, নিজের বন্ধু ও শত্রুদের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র রীতিনীতি এবং ব্যবস্থাদি কী রয়েছে? তারপর ভয় প্রদর্শনের পাশাপাশি করুনা এবং অনুগ্রহের কথাও বলা হয়েছে। তাছাড়া উপদেশ প্রদান ও গ্রহণ এবং আদেশ ও পথ প্রদর্শনের দায়িত্বও আদায় করা হয়েছে যেন প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ব্যক্তিগণ বিরত হতে চাইলে বিরত হতে পারে।
প্রকৃতই কোরআন মাজীদ মুসলিমগনকে অন্য এক জগতে পরিভ্রমণে রত রেখেছিল এবং তাহাদিগকে সৃষ্টির বিভিন্ন দৃশ্যপট, প্রভুত্বের পরিপাট্য, লিল্লাহিয়াতের চরমোৎকর্ষ এবং আনুকম্পা অনুগ্রহ , দয়াদাক্ষীণ্য সন্তুষ্টি ইত্যাদি সম্পর্কে এমন সব দীপ্তিময় দৃশ্য প্রদর্শন করা হচ্ছিল যে, সেগুলর আকর্ষণ ও মোহের সামনে কোন প্রতিবন্ধকতাই টিকে থাকতে পারেনি।
প্রকৃতই কোরআন মাজীদ মুসলিমগনকে অন্য এক জগতে পরিভ্রমণে রত রেখেছিল এবং তাহাদিগকে সৃষ্টির বিভিন্ন দৃশ্যপট, প্রভুত্বের পরিপাট্য, লিল্লাহিয়াতের চরমোৎকর্ষ এবং আনুকম্পা অনুগ্রহ , দয়াদাক্ষীণ্য সন্তুষ্টি ইত্যাদি সম্পর্কে এমন সব দীপ্তিময় দৃশ্য প্রদর্শন করা হচ্ছিল যে, সেগুলর আকর্ষণ ও মোহের সামনে কোন প্রতিবন্ধকতাই টিকে থাকতে পারেনি।
উপরন্ত, সে সকল আয়াতে মুসলিমগনকে যে সব সম্বোধন করা হচ্ছিল তা হলোঃ-
'তাদের প্রতিপালক তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর দয়া ও সন্তুষ্টির, আর জান্নাতের যেখানে তাদের জন্য আছে স্থায়ী সুখ- সামগ্রী।" (তাওবাঃ ২১আয়াত)
তারমধ্যে এমনও আয়াত রয়েছে যাতে সীমালংঘনকারী কাফিরদের বিরোধীতার পরিনতির চিত্র অংকন করা হয়েছে- আল্লাহ তা'আলা বলেন,
"যেদিন তাদেরকে মুখের ভরে আগুনের মধ্যে হিঁচড়ে টেনে আনা হবে (তখন বলা হবে) জাহান্নামের স্পর্শ আস্বাদন কর । (কবামার: ৪৮ নং আয়াত)
৬।সফলতার সুসংবাদ
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও মুসলিমগন নিপীড়িত নির্যাতিত হওয়ার পূর্ব থেকে বরং বলা যায় বহু পূর্বে থেকেই অবহিত ছিলেন যে, ইসলাম গ্রহণ করার অর্থ স্থায়ী বিবাদে জড়িয়ে পড়া কিংবা বিবাদ বিসম্বাদের কারণে ক্ষয়-ক্ষতির শিকারে পরিণত হওয়া নয়, বরং এর প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী দাওয়াত পেশ করার প্রথম দ্বীন থেকেই অজ্ঞতা এবং তাদের অনুসৃত যাবতীয় ভ্রান্ত পথ ও পদ্ধতির অবসান কল্পে আল্লাহ ও আল্লাহ্র রাসূলের নির্দেশিত পথে অচল অটল থাকা। এ দাওয়াতের আরও একটি অত্যত্ন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীর রাজনৈতিক অঙ্গণে ইসলামী ভাবধারা ও ইসলামী বিধি-বিধানের বিস্তরণে বিশ্ব রাজনীতিকে এমনভাবে প্রভাবিত করা যাতে বিশ্বের জাতিসূমহকে আল্লাহ্র রেযামন্দি বা সন্তষ্টির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বান্দার দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহ্র দাসত্ব প্রতিষ্ঠিত করা।
কোরআন মাজীদে এ শুভ সংবাদ কখনো আকার ইজ্ঞিতে কখনো বা সুস্পষ্ট ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। অথচ গোটা পৃথিবীর উপর মুসলিমগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আভাষ ইজ্ঞিত সত্বেও মনে হচ্ছিল তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মুসলিমগণ যখন এমন এক অবস্থায় নৈরাশ্যের অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তখন অন্য দিকে আবার এমন সব আয়াত অবতীর্ণ হচ্ছিল যার মধ্যে বিগত নাবিগনের ঘটনাবলী এবং তাঁদের মিথ্যাপ্রতিপন্নকারিগণের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ ছিল। সে সব আয়াতে যে চিত্র অংকন করা হচ্ছিল তাঁর সজ্ঞে মক্কার মুসলিম ও কাফেরগনের অবস্থার হুবহু সাদৃশ্য ছিল।এ সকল ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে এ ইজ্ঞিতও প্রদান করা হচ্ছিল যে, সেই সকল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যায়-অত্যাচারিগণ কিভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং আল্লাহার সৎ বান্দাগন কিভাবে পৃথিবীর উওরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে আবতীন আয়াতসমূহের মধ্যে এমন আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছিল যার মধ্যে মুসলিমগণের বিজয়ী হওয়ার শুভ সংবাদ বিদ্যমান ছিল যেমনটি কোরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-
আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই বলা আছে যে, তাদেরকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে। আর আমার সৈন্যরাই বিজয়ী হবে। কাজেই কিছু সময়ের জন্য তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর। আর তাদেরকে দেখতে থাকো, তারা শীগ্রই দেখতে পাবে(ঈমান ও কুফরীর পরিণানা। তারা কি আমার শান্তি তরান্বিত করতে চায়? শাস্তি যখন তাদের উঠানে নেমে আসবে তখন কতই না মন্দ হবে ঐ লোকদের সকালটি যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল । [আস-স-ফফাত(৩৭) :১৭১-১৭৭)
'এ সংঘবব্ধ দল শীগ্রই পরাজিত হবে আর পিছন ফিরে পালাবে।'(আল -কামার ৫৪: ৪৫)
'(আরবের কাফিরদের) সম্মিলিত বাহিনির এই দল টি এখানেই (অথাৎ এই মাক্কাহ নগরীতেই একদিন) পরাজিত হবে [স-দ(৩৮): ১১]
যারা অত্যাচারিত হওয়ার পরও আল্লাহ্র পথে হিজরত করেছে, আমি তাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই এ দুনিয়াতে উত্তম আবাস দান করবো, আর আখিরাতের পুরষ্কার তো অবশ্যই সবচেয়ে বড়।হায় তারা যদি জানতো।[আন-নাহল (১৬) : ৪১]
এভাবে কাফের গণ রাসূলুল্লাহ(সা) এর নিকট ইউসুফ(আ:) এর ঘটনা জিজ্ঞেস করল, তার উত্তরে আনুষজ্ঞিক আয়াতে করীমা আবতীর্ণ হলঃ-
ইউসুফ আর তাঁর ভাইদের ঘটনায় সত্য সন্ধানীর জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে।' (ইউসুফ১২: ৭)
অথাৎ মক্কাবাসী মুশরিকগণ আজ ইউসুফ ( আ ) এর যে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে এরা নিজেরাও অনুরূপ অকৃতকার্য হবে যেমন ইউসূফ( আ)এর ভাইগণ অকৃতকার্য হয়েছিল এবং তাদেরও রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থা তাই হবে যা তাঁদের ভাইগণের হয়েছিল। তাঁদের ইউসূফ (আ ) এবং তাঁর ভাইদের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত উচিত যে, অত্যাচারিদের হার কিভাবে হয়।
পয়ঘাম্বার কথা উল্লেখ করে কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
'কফিরগণ তাঁদের রাসূলদের বলেছিল,'আমর তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্যই অবশ্যই বের করে দিব, অন্যথায় তোমাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই আমাদের ধর্মর্মতে ফিরে আসতে হবে । এ অবস্থায় রাসূলদের প্রতি তাদের প্রতিপালক এ মর্মে ওয়াহী করলেন যে,'আমি যালিমদেরকে অবশ্য অবশ্যই ধবংস করব। আর তাদের পরে তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই জমিনে পূনর্বাসিত করব। এ (শুভ) সংবাদ তাদের জন্য যারা আমার সামনে এসে দাঁড়ানোর ব্যপারে ভয় রাখে আর আমার শাস্তির ভয় দেখানোতে শংকিত হয়।'[ইব্রাহিম(১৪) ১৩-১৪]
অনূরুপভাবে যে সময়ে পারস্য ও রোমে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠল তখন মক্কার কাফেরগণ চাইল যে পারসিকরা জয়ী হোক। কেননা তারা ছিল কাফের। আর মুসলিমগণ চাইল যে রোমীয়গণ জয়ী হোক, কেননা তারা আর যা হোক না কেন রোমীয়গণ আল্লাহ্র উপর, পয়গম্বর, ওহী, আসমানি কিতাবসমূহ এনং বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস করার করার দাবিদার ছিলেন। কিন্তু পারস্যবাসীগণ যখন জয় লাভের পথে অনেকটা অগ্রসর হল তখন আল্লাহ তা'আলা এ শুভ সংবাদ যথেষ্ট মনে না করে তার পাশাপাশি এ শুভ সংবাদটি প্রদান করলেন যে ,
রোমীয়গণ বিজয়ী হওয়ার প্রাক্কালে আল্লাহ তা'আলা মুসলিমগণকে বিশেষ সাহায্য প্রদান করবেন যাতে তারা সন্তোষ লাভ করে।যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,
'সে দিন মু'মিনরা আনন্দ করবে। (সে বিজয় অর্জিত হবে)আল্লাহর সাহায্যে।'[আর-রূম(৩০) :৩-৪]
কোরআন মাজীদে এ শুভ সংবাদ কখনো আকার ইজ্ঞিতে কখনো বা সুস্পষ্ট ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। অথচ গোটা পৃথিবীর উপর মুসলিমগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আভাষ ইজ্ঞিত সত্বেও মনে হচ্ছিল তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মুসলিমগণ যখন এমন এক অবস্থায় নৈরাশ্যের অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তখন অন্য দিকে আবার এমন সব আয়াত অবতীর্ণ হচ্ছিল যার মধ্যে বিগত নাবিগনের ঘটনাবলী এবং তাঁদের মিথ্যাপ্রতিপন্নকারিগণের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ ছিল। সে সব আয়াতে যে চিত্র অংকন করা হচ্ছিল তাঁর সজ্ঞে মক্কার মুসলিম ও কাফেরগনের অবস্থার হুবহু সাদৃশ্য ছিল।এ সকল ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে এ ইজ্ঞিতও প্রদান করা হচ্ছিল যে, সেই সকল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যায়-অত্যাচারিগণ কিভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং আল্লাহার সৎ বান্দাগন কিভাবে পৃথিবীর উওরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে আবতীন আয়াতসমূহের মধ্যে এমন আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছিল যার মধ্যে মুসলিমগণের বিজয়ী হওয়ার শুভ সংবাদ বিদ্যমান ছিল যেমনটি কোরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ-
আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই বলা আছে যে, তাদেরকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে। আর আমার সৈন্যরাই বিজয়ী হবে। কাজেই কিছু সময়ের জন্য তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর। আর তাদেরকে দেখতে থাকো, তারা শীগ্রই দেখতে পাবে(ঈমান ও কুফরীর পরিণানা। তারা কি আমার শান্তি তরান্বিত করতে চায়? শাস্তি যখন তাদের উঠানে নেমে আসবে তখন কতই না মন্দ হবে ঐ লোকদের সকালটি যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল । [আস-স-ফফাত(৩৭) :১৭১-১৭৭)
'এ সংঘবব্ধ দল শীগ্রই পরাজিত হবে আর পিছন ফিরে পালাবে।'(আল -কামার ৫৪: ৪৫)
'(আরবের কাফিরদের) সম্মিলিত বাহিনির এই দল টি এখানেই (অথাৎ এই মাক্কাহ নগরীতেই একদিন) পরাজিত হবে [স-দ(৩৮): ১১]
যারা অত্যাচারিত হওয়ার পরও আল্লাহ্র পথে হিজরত করেছে, আমি তাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই এ দুনিয়াতে উত্তম আবাস দান করবো, আর আখিরাতের পুরষ্কার তো অবশ্যই সবচেয়ে বড়।হায় তারা যদি জানতো।[আন-নাহল (১৬) : ৪১]
এভাবে কাফের গণ রাসূলুল্লাহ(সা) এর নিকট ইউসুফ(আ:) এর ঘটনা জিজ্ঞেস করল, তার উত্তরে আনুষজ্ঞিক আয়াতে করীমা আবতীর্ণ হলঃ-
ইউসুফ আর তাঁর ভাইদের ঘটনায় সত্য সন্ধানীর জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে।' (ইউসুফ১২: ৭)
অথাৎ মক্কাবাসী মুশরিকগণ আজ ইউসুফ ( আ ) এর যে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে এরা নিজেরাও অনুরূপ অকৃতকার্য হবে যেমন ইউসূফ( আ)এর ভাইগণ অকৃতকার্য হয়েছিল এবং তাদেরও রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থা তাই হবে যা তাঁদের ভাইগণের হয়েছিল। তাঁদের ইউসূফ (আ ) এবং তাঁর ভাইদের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত উচিত যে, অত্যাচারিদের হার কিভাবে হয়।
পয়ঘাম্বার কথা উল্লেখ করে কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
'কফিরগণ তাঁদের রাসূলদের বলেছিল,'আমর তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্যই অবশ্যই বের করে দিব, অন্যথায় তোমাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই আমাদের ধর্মর্মতে ফিরে আসতে হবে । এ অবস্থায় রাসূলদের প্রতি তাদের প্রতিপালক এ মর্মে ওয়াহী করলেন যে,'আমি যালিমদেরকে অবশ্য অবশ্যই ধবংস করব। আর তাদের পরে তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই জমিনে পূনর্বাসিত করব। এ (শুভ) সংবাদ তাদের জন্য যারা আমার সামনে এসে দাঁড়ানোর ব্যপারে ভয় রাখে আর আমার শাস্তির ভয় দেখানোতে শংকিত হয়।'[ইব্রাহিম(১৪) ১৩-১৪]
অনূরুপভাবে যে সময়ে পারস্য ও রোমে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠল তখন মক্কার কাফেরগণ চাইল যে পারসিকরা জয়ী হোক। কেননা তারা ছিল কাফের। আর মুসলিমগণ চাইল যে রোমীয়গণ জয়ী হোক, কেননা তারা আর যা হোক না কেন রোমীয়গণ আল্লাহ্র উপর, পয়গম্বর, ওহী, আসমানি কিতাবসমূহ এনং বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস করার করার দাবিদার ছিলেন। কিন্তু পারস্যবাসীগণ যখন জয় লাভের পথে অনেকটা অগ্রসর হল তখন আল্লাহ তা'আলা এ শুভ সংবাদ যথেষ্ট মনে না করে তার পাশাপাশি এ শুভ সংবাদটি প্রদান করলেন যে ,
রোমীয়গণ বিজয়ী হওয়ার প্রাক্কালে আল্লাহ তা'আলা মুসলিমগণকে বিশেষ সাহায্য প্রদান করবেন যাতে তারা সন্তোষ লাভ করে।যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,
'সে দিন মু'মিনরা আনন্দ করবে। (সে বিজয় অর্জিত হবে)আল্লাহর সাহায্যে।'[আর-রূম(৩০) :৩-৪]
পরবর্তী পর্যায়ে আল্লাহ তা'আলার এ সাহায্যই বদর যুদ্ধে অর্জিত মহাসাফল্য এবং বিজয়ের মধ্য দিয়ে রূপ লাভ করে। অধিকন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও অনুরূপ শুভ সংবাদ পরিবেশন করে মুসলিমগণকে উৎসাহিত করতেন। যেমন হজ্জের এবং ওকাজ, মাজান্নাহ, জিল মাযাযের জনগণের মধ্যে প্রচারের জন্য গমন করতেন তখন শুধু মাত্র জান্নাতেরই শুভসংবাদ দিতেন না বরং পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণাও করতেন,
অর্থঃ 'ওগো জনগণ! কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ কর তাহলে সফলকাম হবে এবং এর ফলে আরবের সম্রাট হতে পারবে এবং আজম তোমাদের অধীনস্থ হয়ে যাবে। আবার তোমরা যখন মৃত্যর পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে তখনো তোমরা সেখানে উচ্চ মর্যাদা ও প্রাধান্য লাভ করবে।
এ ঘটনা ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে ।ব্যাপারটি হচ্ছে যখন' উতবাহ বিন রাবী'আহ নাবি(সাঃ)এর নিকট পার্থিব জগতের পণ্য দ্রব্যের প্রস্তাব দিয়ে বিনিময় বা লেনদেন করতে চাইলে এবং তদুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হামীম সিজদার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনালেন তখন উতবাহর এ বিশ্বাস হয়ে গেল যে,শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ) ই জয়ী হবেন।
অনুরূপভাবে আবু তালিবের নিকট আগমনকারী কুরাইশগণের শেষ প্রতিনিধিদের সাথে নাবী (সাঃ) এর যে কথোপকথন হয়েছিল তারও বিস্তারিত বিবরণ ইতিপূর্বে দেওয়া হয়েছে।সে সময়ও নাবী কারীম(সাঃ) মুশরিকগণকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, তারা যদি শুধু তাঁর একটি কথা মেনে নেয় তাহলে গোটা আরবজাহানে তাঁদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এবং আজম তাদের অধীনস্থ হয়ে যাবে।
খাব্বার বিন আরত্ত বলেছিলেন যে,'এক দফা আমি নাবী কারীম(সাঃ)এর খেদমতে হাজির ছিলাম। তিনি কা'বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরকে বালিশ করে শুয়েছিলেন। সে সময় আমরা মুশরিকগণের হাতে দারুনভাবে নির্যাতিত হচ্ছিলাম।আমি বললাম, আল্লাহর সমীপে প্রার্থনা করছেন না কেন? এ কথা শ্রবণ করে নাবী কারীম(সাঃ) এর মুখমণ্ডল রক্তবণ ধারণ করল।তিনি উষ্মার সজ্ঞে বললেন ,
অর্থঃ 'ওগো জনগণ! কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ কর তাহলে সফলকাম হবে এবং এর ফলে আরবের সম্রাট হতে পারবে এবং আজম তোমাদের অধীনস্থ হয়ে যাবে। আবার তোমরা যখন মৃত্যর পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে তখনো তোমরা সেখানে উচ্চ মর্যাদা ও প্রাধান্য লাভ করবে।
এ ঘটনা ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে ।ব্যাপারটি হচ্ছে যখন' উতবাহ বিন রাবী'আহ নাবি(সাঃ)এর নিকট পার্থিব জগতের পণ্য দ্রব্যের প্রস্তাব দিয়ে বিনিময় বা লেনদেন করতে চাইলে এবং তদুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হামীম সিজদার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনালেন তখন উতবাহর এ বিশ্বাস হয়ে গেল যে,শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ) ই জয়ী হবেন।
অনুরূপভাবে আবু তালিবের নিকট আগমনকারী কুরাইশগণের শেষ প্রতিনিধিদের সাথে নাবী (সাঃ) এর যে কথোপকথন হয়েছিল তারও বিস্তারিত বিবরণ ইতিপূর্বে দেওয়া হয়েছে।সে সময়ও নাবী কারীম(সাঃ) মুশরিকগণকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, তারা যদি শুধু তাঁর একটি কথা মেনে নেয় তাহলে গোটা আরবজাহানে তাঁদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এবং আজম তাদের অধীনস্থ হয়ে যাবে।
খাব্বার বিন আরত্ত বলেছিলেন যে,'এক দফা আমি নাবী কারীম(সাঃ)এর খেদমতে হাজির ছিলাম। তিনি কা'বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরকে বালিশ করে শুয়েছিলেন। সে সময় আমরা মুশরিকগণের হাতে দারুনভাবে নির্যাতিত হচ্ছিলাম।আমি বললাম, আল্লাহর সমীপে প্রার্থনা করছেন না কেন? এ কথা শ্রবণ করে নাবী কারীম(সাঃ) এর মুখমণ্ডল রক্তবণ ধারণ করল।তিনি উষ্মার সজ্ঞে বললেন ,
''যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়ে গেছেন তাঁদের শরীরের হাড়ে মাংস পর্যন্ত ছিলনা। যাঁদের শরীরে মংস ছিল তাঁদের মংসপেশীতে লোহার চিরুনি দ্বারা আঁচড়ানো হতো। কিন্তু নির্যাতিত এবং নিপীড়িত হয়েও তাঁরা কোন দিন ধৈর্যচ্যুত হ্য় নাই "
তারপর তিনি বলেন,
'আল্লাহ এ বিষয়কে অর্থাৎ দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিবেন ইনশা-আল্লাহ। এমনকি সানআ হতে হাজারা মাওত পর্যন্ত একজন আরোহীর যাতায়াতকালে আল্লাহ ছাড়া কারোই ভয় থাকবেনা। তবে ছাগলের জন্য বাঘের ভয়, থাকবে । অন্য এক বর্ণনায় এটাও আছে - কিন্তু তোমরা তারাহুড়ো করছো..
এটা বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, এ শুভ সংবাদের কোন কিছুই গোপন ছিল না। মুসলিমগণের মতো কাফিরগণও এ সব ব্যপারে সুবিদিত ছিল। তাঁদের এসব কিছু আবগতির কারণে যখন আসওয়াদ বিন মুওালিব এবং তাঁর বদ্ধুগণ সাহাবীগণকে দেখতে পেতো তখন বিদ্রপ করে একজন অপরজনকে বলত, দেখ দেখ ঐ যে , সম্রাট এসে গেছে , এরা শীঘ্রই ক্বায়সার ও কিসরা বাদশাহকে পরাজিত করবে। এ সব কথা বলে তাঁরা করতালি দিত এবং মুখে বিদ্রূপাত্মক শিস দিত।
সে সময়ে সাহাবিগণের বিরুদ্ধে অন্যায় অত্যাচার উতপীড়ন নিপীড়ন ,লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সবকিছুর ব্যাপ্তি এবং মাত্রা উভয় দিক থেকে চরমে পৌঁছেছিল কিন্তু তা সত্বেও জান্নাত লাভের নিশ্চিত আশায , ভরসা এবং উজ্জল ভবিষ্যতের শুভসংবাদ ঝড়ো হাওয়ার ঝাপটায় নিক্ষিপ্ত ও বিতাড়িত মেঘমালার মত মুসলিমগণের মানস আকাশ থেকে যাবতীয় দুঃখ বিপদকে বিদূরিত করে দিত।
এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মুসলিমগণের ঈমানী তালিমের মাধ্যমে অবিরামভাবে আধ্যাত্মিক খোরাক যোগাতেন, কিতাব ও হিকমার শিক্ষা দিয়ে আত্মার পরিশুদ্ধির ব্যবস্থা করতেন এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সময়োচিত আদেশ ও নির্দ্দেশনা প্রদান করতেন। তাছাড়া আত্মসম্মানবোধ, দৈহিক ও মানসিক পরিচ্ছন্নতা, চরিত্র মাধুর্য ও চারিত্রিক প্রবিত্রতা, সহিষ্ণুতা ,সংযম, সত্য ও ন্যয়ের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, অসত্য, অন্যয় অবিচারের প্রতি ঘৃনা ও আপোষহীন সংগ্রাম ইত্যাদি গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে সাহাবিগণকে এমনভাবে তৈরি করে নিয়েছিলেন যেন, তাঁরা প্রয়জনের মুহূর্তে এক একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠতে পারেন।
সর্বোপরি অজ্ঞানের অন্ধকার থেকে বের করে হেদায়েতের আলোকজ্জল প্রান্তরে এনে যখন তিনি(সাঃ) তাঁদেরকে দাঁড় করিয়ে দিলেন তখন তাঁদের পূর্বের জীবন এবং তাঁদের নতুন জীবনের মধ্যে রতের অন্ধকার ও দিনের আলোর মতই পার্থ্যক সূচিত হয়ে গেল। তাঁদের অন্তদৃষ্টির সামনে প্রতিভাত হয়ে উঠল স্রষ্টার অনন্ত মহিমা ও সৃষ্টি দর্শন, সীমাহীন বিশ্বের অন্তহীন বিস্তার ও বৈচিত্র, মানবজীবনের অনন্ত সম্ভাবনা পথ ও পাথেয় এবং পরলৌকিক জিবনের সফলতা ও সাফল্য সম্পর্কিত মহাসত্যের উপলব্ধি।
উপর্যুক্ত বিষয়াদির আলোকে প্রত্যেক সাহাবীর মধ্যে এমন একটি সমন্বিত চেতনার সৃষ্টি হল যার মাধ্যমে বিপদে- আপদে ধৈর্য ধারনের অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, প্রবণতার মোড় পরিবর্তন, আত্মশক্তির উতকর্ষ সাধন, নিবেদিত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভকে জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে তাঁরা এমন এক জীবন গঠনে ব্রতী হয়ে গেলেন কোথাও তার কোন তুলনা মিলে না ।
________
তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা: ১৬১-১৬৯
________
তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা: ১৬১-১৬৯
Post a Comment