মা বিধবা, দাদা বৃদ্ধ এ (ইয়াতীম) শিশুকে লালন-পালন করে তার বিনিময়ে কীইবা এমন পাওয়ার আশা করা যেতে পারে? ইতস্তত করে এ সবকিছু ভেবে-চিন্তে দলের কেউই তাকে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলো না।
এদিকে দলের অন্যান্য মহিলা যারা আমার সঙ্গে এসেছিল তারা সকলেই একটি করে শিশু সংগ্রহ করে নিল। অবশিষ্ট রইলাম শুধু আমি (হালিমাহ)। আমার পক্ষে কোন শিশু সংগ্রহ করা সম্ভব হলো না।
ফিরে যাওয়ার সময় যতই ঘনিয়ে আসতে লাগল আমার মনটা ক্রমান্বয়ে ততই যেন কষ্টকর ও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতে থাকল। অবশেষে আমি আমার স্বামীকে বললাম, আমার সঙ্গিনীরা সকলেই দুধপানের জন্য সন্তান নিয়ে ফিরছে আর আমাকে শূন্য হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে, এ যেন আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তার চেয়ে বরং আমি সেই ইয়াতীম ছেলেটিকেই নিয়ে যাই (যা করেন আল্লাহ)।
স্বামী বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, কোন অসুবিধা নেই, তুমি গিয়ে তাকেই নিয়ে এসো। এমনটিও হতে পারে যে, আল্লাহ এর মধ্যেই আমাদের জন্য কোন বরকত নিহিত রেখেছেন। এমন এক অবস্হা এবং মন-মানসিকতার প্রেক্ষাপটে শিশু মুহাম্মদ (সা.) কে দুধ পান করানোর জন্য আমি (হালিমাহ) গ্রহণ করলাম।
তারপর হালীমাহ বললেন, 'যখন আমি শিশু মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে নিজ আস্তানায় ফিরে এলাম এবং তাঁকে আমার কোলে রাখলাম তখন তিনি তাঁর দু'সীনা আমার বক্ষের সঙ্গে মিলিত করে পূর্ণ পরিতৃপ্তির সঙ্গে দদুগ্ধ পান করলেন। তাঁর দুধভাই অর্থাৎ আমার গর্ভজাত সন্তানটিও পূর্ণ পরিতৃপ্তির সঙ্গে দুগ্ধ পান করলেন। এরপর উভয়ই ঘুমিয়ে পড়লো। এর পূর্বে তার এভাবে ঘুম আমরা কক্ষণই দেখিনি।
অন্যদিকে আমার স্বামী উট দোহন করতে গিয়ে দেখেন যে, তার উলান দুধে পরিপূর্ণ রয়েছে। তিনি এতো বেশি পরিমাণে দুধ দোহন করলেন যে, আমরা উভয়েই তৃপ্তির সঙ্গে পেট পুরে তা পান করলাম এবং বড় আরামের সঙ্গে রাত্রি যাপন করলাম। পূর্ণ পরিতৃপ্তির সঙ্গে রাত্রি যাপন শেষে যখন সকাল হলো তখন আমার স্বামী বললেন, 'হালীমাহ! আল্লাহর শপথ, তুমি একজন মহা ভাগ্যবান সন্তান লাভ করেছ।' উত্তরে বললাম, আল্লাহর শপথ 'অবস্হা দেখে আমারও যেন তাই মনে হচ্ছে।'
হালীমাহ আরো বললেন যে, এরপর আমাদের দল মক্কা থেকে নিজ নিজ গৃহে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। শিশু মহাম্মদ (সা.) কে বুকে নিয়ে আমার সেই দুর্বল এবং নিস্তেজ মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে আমিও তাদের সঙ্গে যাত্রা শুরু করলাম। কিন্তু আল্লাহর শপথ আমার সেই দুর্বল গাধাই সকলকে পিছনে ফেলে দ্রুত বেগে সকলের অগ্রভাগে এগিয়ে যেতে থাকলো। অন্য কোন গাধাই তার সাথে চলতে পারলো না।
তথ্যসূত্রঃ আর-রাহীকুল মাখতুম
সুবহানাল্লাহ।
ReplyDeletePost a Comment