উমাইয়া যুগে সাঈদ ইবন যায়িদ(রা)কে কেন্দ্র করে এক আশ্চর্যময় ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে মদীনাবাসীদের মুখে ঘটনাটি শোনা যেত।
ঘটনাটি হল, আরওয়া বিন্তু উওয়াইস নাম্নী এক মহিলা দুর্নাম রটাতে থাকে যে সাঈদ ইবন যায়িদ তার জমির একাংশ জরবদখল করে নিজ জমির সাথে মিলিয়ে নিয়েছেন। যেখানে সেখানে সে একথা বলে বেড়াতে লাগল। এক পর্যায়ে সে মদীনার ওয়ালী মারওয়ান ইবনুল হিকামের নিকট বিষয়টি উত্থাপন করল। বিষয়টি যাচাই করে দেখার জন্য মারওয়ান কয়েকজন লোককে সাঈদের নিকট পাঠালেন। রাসূলুল্লাহর সা. সাহাবী সাঈদের(রা) জন্য বিষয়টি ছিল বেশ কষ্টদায়ক। তিনি বললেনঃ
‘‘তারা মনে করে আমি তার ওপর যুল্ম করছি। কিভাবে আমি যুল্ম করতে পারি? আমি তো রাসূলুল্লাহকে সা. বলতে শুনেছিঃ ‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি যুল্ম করে নেবে, কিয়ামতের দিন সাত তবকা যমীন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে।’ ইয়া আল্লাহ! সে ধারণা করেছে অমি তার ওপর যুল্ম করেছি। যদি সে মিথ্যুক হয়, তার চোখ অন্ধ করে দাও, যে কূপ নিয়ে সে আমার সাথে ঝগড়া করেছে, তার মধ্যেই তাকে নিক্ষেপ কর এবং আমার পক্ষে এমন আলোক প্রকাশ করে দাও যাতে মুসলিমদের মাঝে স্পষ্ট হংয়ে যায় যে আমি তার ওপর কোন যুল্ম করিনি।’’
এ ঘটনার পর কিছু দিন যেতে না যেতেই আকীক উপত্যকা এমনভাবে প্লাবিত হল যে অতীতে আর কখনো তেমন হয়নি। ফলে দু’যমীনের মাঝখানে বিতর্কিত অদৃশ্য চিহ্নটি এমনভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ল যে, মুসলিমরা তা দেখে বুঝতে পারল সাঈদ সত্যবাদী। তারপর একমাস না যেতেই মহিলাটি অন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় একদিন সে তার যমীনে পায়চারী করতে করতে বিতর্কিত কূপটির মধ্যে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
আবদুল্লাহ ইবন ’উমার রা. বলেন,
‘আমরা শুনতাম লোকেরা কাউকে অভিশাপ দিতে গেলে বলতঃ আল্লাহ তোমাকে অন্ধ করুন যেমন অন্ধ করেছেন আরওয়াকে। এ ঘটনায় অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই, কারণ রাসূল সা. তো বলেছেনঃ
‘তোমরা মাযলুমের দু’আ থেকে দূরে থাক। কারণ, সেই দু’আ আর আল্লাহর মাঝে কোন প্রতিবন্ধক থাকে না।’ এই যদি হয় সব মাযলুমের অবস্থা, তাহলে ‘আশারায়ে মুবাশ্শারাহ’ জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ জনের একজন সাঈদ ইবন যায়িদের মত মাযলুমের দু’আ কবুল হওয়া তেমন আর আশ্চর্য কি?
আবু নুয়াঈম, বিরাহ ইবনুল হারিস থেকে বর্ণনা করেছেনঃ মুগীরা ইবন শু’বা একটি বড় মসজিদে বসে ছিলেন। তখন তাঁর ডানে বাঁয়ে বসা ছিল কুফার কিছু লোক। এমন সময় সাঈদ ইবন যায়িদ নামক এক ব্যক্তি এলেন। মুগীরা তাকে সালাম করে খাটের ওপর পায়ের দিকে বসালেন। অতঃপর কুফাবাসী এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে মুগীরার দিকে মুখ করে গালি বর্ষণ করতে লাগল। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ মুগীরা, এ লোকটি কার প্রতি গালি বর্ষণ করছে? বললেনঃ আলী ইবন আবী তালিবের প্রতি। তিনি বললেনঃ ওহে মুগীরা! এভাবে তিনবার ডাকলেন। তারপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহর সা. সাহাবীদের আপনারা সামনে গালি দেওয়া হবে, আর আপনি তার প্রতিবাদ করবেন না, এ আমি দেখতে চাইনা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, রাসূল সা. বলেছেনঃ আবু বকর জান্নাতী, ’উমার জান্নাতী, ’উসমান জান্নাতী, ’আলী জান্নাতী, তালহা জান্নাতী, যুবাইর জান্নাতী, আবদুর রহমান জান্নাতী, সা’দ ইবন মালিক জান্নাতী। এবং নবম এক ব্যক্তিও জান্নাতী, তোমরা চাইলে আমি তার নামটিও বলতে পারি। রাবী বলেনঃ লোকেরা সমস্বরে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলঃ হে রাসূলুল্লাহর সা. সাহাবী, নবম ব্যক্তিটি কে? বললেনঃ নবম ব্যক্তিটি আমি। তারপর তিনি কসম করে বললেনঃ যে ব্যক্তি একটি মাত্র যুদ্ধে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে অংশগ্রহণ করেছে, রাসূলুল্লাহর সাথে তার মুখমণ্ডল ধূলি ধূসরিত হয়েছে, তার এই একটি কাজ যে কোন ব্যক্তির জীবনের সকল সৎকর্ম অপেক্ষা উত্তম- যদিও সে নূহের সমান বয়সই লাভ করুক না কেন। (হায়াতুস সাহাবা/ ২য়– ৪৭০ পৃঃ)
তিনি ছিলেন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবীদের অন্যতম। সাঈদ ইবন হাবীব বলেনঃ রাসূলুল্লাহর সা. নিকট আবু বকর, ’উমার, উসমান, আলী, সা’দ, সাঈদ, তালহা, যুবাইর ও আবদুর রহমান ইবনে আওফের স্থান ও ভূমিকা ছিল একই। যুদ্ধের ময়দানে তাঁরা থাকতেন রাসূলুল্লাহর সা. আগে এবং নামাযের জামায়াতে থাকতেন তাঁর পেছনে।
সাঈদ ইবন যায়িদের নিকট থেকে সাহাবীদের মধ্যে ইবন ’উমার, ’আমর ইবন হুরাইস, আবু আত্তুফাইল এবং আবু উসমান আন-নাহদী, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব, কায়েস ইবন আবী হাযেম প্রমুখ প্রখ্যাত তাবেয়ীগণও হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ওয়াকিদী বলেনঃ তিনি আকীক উপত্যকায় ইনতিকাল করেন এবং মদীনায় সমাহিত হন। মৃত্যুসন হিজরী ৫০। মতান্তরে হিজরী ৫১ অথবা ৫২। সত্তর বছরের ওপর তিনি জীবন লাভ করেন। সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাস(রা) তাঁকে গোসল দিয়ে কাফন পরান এবং আবদুল্লাহ ইবন ’উমার(রা) নামাযে জানাযার ইমামতি করেন। তবে হাইসাম ইবন ’আদীর মতে তিনি কুফায় ইনতিকাল করেন এবং প্রখ্যাত সাহাবী হযরত মুগীরা ইবন শু’বা(রা) তাঁর জানাযার ইমামতি করেন।
.
[তথ্যসূত্র: আসহাবে রাসুলের জীবনকথা ]
Post a Comment