আল্লাহ তা'আলা মাখলূককে কুফরীর প্রভাব ও ঈমানের আলো থেকে মুক্ত অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন। তাদের মাঝে যোগ্যতা দিয়েছেন ভালো, মন্দ, আলো, আঁধার, পাপ, পুণ্য পার্থক্য করার ও গ্রহণ-বর্জন করার। সূরা তাগাবুন এর ২ নং আয়াত এ বর্ণিত হয়েছেঃ "আল্লাহ তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ হয় কাফির আবার কেউ হয় মু'মিন।"
মাখলূককে সৃষ্টি করার পর, আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলদের মাধ্যমে ও তাদের পরে তাঁদের স্থলাভিষক্তদের মাধ্যমে, তাঁর ইবাদাতের জন্য সম্বোধন করেন। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয় ঈমান ও আনুগত্যের, বারণ করা হয় কুফর ও অবাধ্যতা থেকে।
মানুষ নিজের ইচ্ছায় আল্লাহর নির্দেশ না মেনে, তাঁকে ছেড়ে, তাঁর সন্তুষ্টির তোয়াক্কা না করে, অহংকার বশে, অবাধ্য হয়ে কুফরী করে। আবার কতক মানুষ তাঁর সন্তুষ্টির আশায়, নিজের কাজের মাধ্যমে, মুখের স্বীকৃতির মাধ্যমে ও অন্তরের প্রত্যয়ের মাধ্যমে ঈমান আনে। সূরা ইউনুস এর ৪৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "নিশ্চয়ই আল্লাহ যুলুম করেন না মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র, বস্তুতঃ মানুষ নিজেরাই যুলুম করে নিজেদের প্রতি।"
কুফরী করা নিজের প্রতি যুলুম করার শামিল। যে কুফরী করল সে তো নিজের ইচ্ছায় করলো। আর যে ঈমান আনল, সে তো নিজের ইচ্ছায় আনল। তাই কারো কাফির হওয়া ও কারো মু'মিন হওয়া আল্লাহর শাশ্বত ইলমের পরিপন্থি নয়। আল্লাহ তাদের কুফরী ও ঈমান সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অবহিত।
অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা মানুষের অন্তরে অনুগত্য কিংবা অবাধ্যতা সৃষ্টি করেন না। বরং যখন বান্দার ইচ্ছা ও ক্রিয়ার সংযোগ হয় তখন তিনি তা তাদের অন্তরে সৃষ্টি করেন।
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে ব্যক্তি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাকে ঈমান অথবা কুফরী গ্রহণ করার বা বর্জন করার শক্তি দিয়েছেন। সে নিজ ইচ্ছায়, কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়াই এর যে কোন একটি গ্রহণ বা বর্জন করতে সক্ষম।
আর যে কুফরী করে আল্লাহ তাকে কুফরী করা অবস্থায় কাফির হিসেবে জানেন। আবার যখন সে কুফরি পরিত্যাগ করে ঈমান আনে, তখন তাকে মু'মিন হিসেবে জানেন। তাঁর এ জানার তারতম্যে তাঁর শাশ্বত জ্ঞান ও সিফাতের কোন পরিবর্তন হয় না। আল্লাহর ইলম তো শাশ্বত। তিনি শুধু এ পরিবর্তন জানেন তা নয়, তিনি তো জানেন এর পরিণতি কি হবে। এর হিশাব, নিকাশ, আযাব, সাওয়াব ইত্যাদি সবকিছু তিনি জানেন।
সূত্রঃ আল-ফিকহুল আকবর
- ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
Post a Comment